আশা
বিনিদ্র কত রাত কাটে বেদনায়,
একা বসে ক্যানভাসে আঁকি এ সময়,
ভাসাভাসা আশা নিয়ে পেতে রাখি কান,
পাই যদি কোনো ক্ষণে প্রাণের সন্ধান,
ক্ষুদে হাতে শিশু এক মারে যদি ঢেলা
কাঁচের কেল্লা হবে ভেঙে খানখান।
-রবি রায়
(মার্চ ১, ২০০২)
ভিড়েই যদি হারাতে হয়
তবে ভেড়ার ভিড়ে কেন,
পথই যদি বাছতে হয়,
বনের মাঝেই হয় যেন।
-রবি রায়
তৃষ্ণা নয়নে তোমার দেখেছি আমি নতুন ভোরের আলো, প্রথম দেখায় তাইতো তোমায় মরমে বেসেছি ভালো।
কণ্ঠে তোমার শুনেছি আমি নতুন ভোরের গান, হৃদয়ে আমার এসেছি কি তাই অবুঝ প্রেমের বান?
শরীর আমার হয়েছে স্নিগ্ধ তোমার পেলব পরশে, বিষাদ চিত্ত হয়েছে মুগ্ধ তোমার কোমল হরষে।
জীবনের স্বাদ পেয়েছি আমি তোমার মনের ভাষায়, চিত্ত কি মোর উন্মাদ তাই জীবন-সুখের আশায়?
তবু জানি আমি জীবন আমার কঠোর গদ্যময়, জীবন কখনো হয়না স্বপ্ন হয়না কাব্যময়।
-রবি রায়
স্বপ্নভঙ্গ
বুকভরা আশা নিয়ে পথ চলা শুরু,
অর্ধশতাব্দীকাল আঁধারে চলেছি পথ আলোর সন্ধানে,
দূরাকাশে মাঝেমাঝে উঁকি মারে তারা,
এখনো পাইনি আমি সূর্যের সন্ধান।
আশা ছিল পূবাকাশ ভরবে আলোয়,
নতুনের বার্তা বয়ে আসবে সকাল,
পাখিদের কলতানে জাগবে মাতন,
ফুলে ফুলে রং মেখে সাজবে কানন,
শ্বাস নেব সুবাসিত ভোরের বাতাস।
পলে পলে গেল চলে কত না সময়,
হলনা এখনো তবু নিশা অবসান,
চারিদিকে শুধু শুনি শ্বাপদের নাদ,
শবদেহ ছিঁড়ে খায় শৃগালের পাল,
পিশাচেরা নৃত্য করে শ্মশানে-মশানে।
স্বপ্নের ভার বয়ে ক্লান্ত আমি আজ,
মাঝে মাঝে মনে হয়
আমি যেন ক্রুশবাহী যিশু,
চারিপাশে অট্টহাসে ঘাতকের দল,
সময় আগতপ্র্রায়,
অচিরেই হব ইতিহাস।
অনন্ত নহে তো এ মর-জীবন
ক্রমে ক্রমে থেমে আসে হৃদস্পন্দন,
আঁধারে হারাই পথ,
স্বপ্ন সব ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষীণ হয়ে যায়।
কী যেন না বলা কথা দলা বাঁধে গলে,
শিশু এক ডাস্টবিনে এঁটো খুঁটে খায়.
লালবাড়ি আলো করে কালো জ্যোর্তিময়,
পত পত ক'রে ওড়ে তেরঙা নিশান,
বিউগলে বাজে গান 'বন্দেমাতরম'।
-রবি রায়
১৫ আগস্ট, ১৯৯৯
চেনা অচেনার ঘোরে
চেনা পথে খুঁজতে হয়না পথ,
চেনা মুখের দেখা পেলে স্বস্তি মেলে,
চেনা কণ্ঠের মিললে সাড়া,
চেনা সুর বাজলে কানে,
চেনা ছন্দে চললে জীবন
মনে সুখের ছোঁওয়া লাগে।
তবু এই চেনা বৃত্তে একদিন
বেঁচে থাকা মনে হয় অর্থহীন।
চেনা বিছানাটা যেন কাঁটা হয়ে বেঁধে,
মন করে আনাগোনা
কখনও মরুঝড়ে সাহারায়,
কখনোবা তুষারপাতে বিদ্ধস্ত সাইবেরিয়ায়,
খাইবারপাস হয়ে কখনোবা মন
হয়ে যায় নিরুদ্দেশ বাবরের দেশে,
ফাহিয়েন হিউয়েন ৎসাঙ মগজে পাকায় গোলমাল,
রামনাথের রথের চাকা পাক খায় মনে বারেবারে,
চেনা মুখের, চেনা সুখের পরিসর ছেড়ে,
মন হয়ে ওঠে ভরপুর ভবঘুরে।
ঠিকানাবিহীন মন
দুনিয়া জুড়ে ঘুরতে থাকে বনবন,
মাঝে মাঝে কখনো উঁকি দেয়
আল্পস্ কিমবা হিমালয়,
পদে পদে বিপদে ভরা এইসব দুর্গম পর্বত,
ঝঞ্ঝায় উত্তাল মাঝ সমুদ্দুর,
উত্তাল সাগরের সফেন সলিল
আর তেপান্তরের মাঠে সহসা হাজির সাইক্লোন
টানে মন,
কান পেতে কখনোবা শোনে মন
ভূস্বর্গে অবিরাম কামানের গর্জন,
বাদশাহী প্রাসাদের ধ্বংসস্তুপে
অশরীরি আরবি রমনীর প্রেমে মগ্ন মন
হয়তবা তৃপ্ত হয় ক্ষণিকের তরে,
ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়া টাইটানিকে
কখনোবা আরোহী মন
মাতাল হয় মরণ মায়ায়,
পথের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা
অচেনা মুখের মিছিলে অজান্তে
শামিল মন,
কখন যেন তাতে কদম মেলায়
আনমনা মন,
খোলা আকাশের নিচে
গ্রাম থেকে তুলে আনা মাঠভরা কালো কালো মানুষের ভীড়ে
কখনোবা মিলে গিয়ে অনুভবে মেলে
না পাওয়া সুখের সন্ধান।
অচেনা এ দুনিয়ায় প্রবেশ অবাধ,
হাতছানি দেয় অবারিত দ্বার,
সেথা হারিয়ে যেতে নেই মানা।
চেনা অচেনার এমনতর দ্বন্দ্বে
কেটে যায় দিন।
চেনা অচেনার ঘোরে দহনে লিপ্ত মন,
মাঝে মাঝে জেগে ওঠে সুপ্ত নয়ন,
চেনা মুখ মাঝে মাঝে কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়,
ছায়া পড়ে তাতে মনের কোণে যতনে লুকানো কালিমা,
মধুমাখা চেনা স্বর
মনে হয় কর্কশ,
চেনা স্বরে যেন বিষধর সর্পের হিসহিস ধ্বনি,
স্বার্থের বিষে জ্বলে কর্ণকুহর,
সহসা হারিয়ে যায় কোনো কাছের হৃদয়,
কালকে যা ছিল চেনা -
আজ যেন বড়ই অচেনা দেখায়,
পথের কিনারে তাই কখনোবা থমকে দাঁড়ায়
সচল হৃদয় এক মেলাতে হিসেব।
চেনা জানা যতকিছু ছেড়ে মন
পালিয়ে বেড়ায় হেথাহোথা যখন তথন,
নাজানা কিসের যেন খোঁজে চেনা বৃত্তের বাইরে
মাঝে মাঝে ছুটে যায় মন,
তবু তাকে সামলে রাখে
যেন কিসের আকর্ষণ।
অবিরত এই দ্বন্দ্বই বুঝিবা জীবন
যা সাগরে ডুব দেয় মুক্তের খোঁজে
আবার ডুবতে ডুবতে আঁকড়ে ধরে খড়কুটো,
মধ্যরাতের আঁধারের মোহে কখনোবা বিবশ হয়,
থাকে তবু নব সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়।
-রবি রায়
জানুয়ারী, ২০০৩
অবেলার অনুভূতি
একান্তে দাঁড়ায়ে দেখি
তরুতলে এক
ঝরে পড়া বর্ণহীন পাতার বাহার –
এ যেন শশ্মানপুরী, মরদেহ সার সার।
সেদিনোতো ছিল সব সবুজেতে মাখামাখি,
মৃদুমন্দ সমীরণে অবিরত স্পন্দনে
সদা ছন্দময়।
অতীত সে জীবনের গান,
বৃন্ত হতে খসে পড়া
তারা আজ অচপল
তরুতলে প্রাণহীন নীরবে শয়ান।
সময়ের তালে তালে অলক্ষ্যে সবার
মিলে যাবে অবরেণ্য তারা
অবহেলে ধরার ধূলায়।
রিক্ত তরুটি আজ সমারোহহীন,
সবুজবিহীন,
শাখাভরা ফুলফল,
দিবাশেষে নীড়ে ফেরা বিহঙ্গের দল
নেই কেউ আজ,
দাবদাহে সুশীতল
ছায়াময় তরুতল
হয়েছে বিলীন,
পথিকের দল তাই
এপথে তো আসে নাই,
অন্য কোথা হেথা নয়
নিয়াছে আশ্রয়।
ফুরায়েছে প্রয়োজন –
পরিত্যক্ত তাই আজ সবাকার কাছে,
আছে শুধু সমব্যাথী এক
হেথা সংগোপনে
ফেলে আসা সময়ের স্মৃতি রোমন্থনে
বেদনাবিধূর এ বিষণ্ণবেলায়।
একাকী দাঁড়ায়ে ভাবি –
জীবনের স্বপ্নময় সবুজ সময়
পিছে ফেলে যেন
আমিওতো আজ ঝরা পাতাসম
শবের সারিতে শামিল।
উদ্দাম যৌবন নিয়েছে বিদায়,
দীপ্তিমান তনুখানি বর্ণহীন আজ,
মনের মাধুরীমাখা কণ্ঠ ম্রিয়মান,
স্তব্ধ কাব্যের ঝংকার।
মেরুদণ্ডে ধরেছে ক্ষয়,
শির অবনতপ্রায়,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে রিক্ত হৃদয়।
মৌলোভে এতকাল ছিল যারা আশেপাশে
ফিরায়েছে মুখ,
হয়ত পড়েছে বাঁধা স্বার্থের বন্ধনে
অন্য কোনোখানে
মায়াবী সুখের সন্ধানে।
বিষয় বিষ পানে মগ্ন পরিজন মোর
প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দ্যাখে দূর হতে
দয়াদৃষ্টি মেলে
কখন মিলাব, হায়,
এ পৃথিবীর ধরার ধূলায়।
বাঁধনছেঁড়া মনে
কেমন যেন তবু এক মুক্তির আস্বাদ,
যাকিছু দেওয়ার ছিল
দেওয়া হয়ে গেছে,
এ হাত শূন্য আজ,
চাওয়া পাওয়া নেই কোনো
কারো কাছে আর,
হয়ে গেছে সারা সব দায়,
জীবনপথের দীর্ঘ সফর শেষে
পারের খেয়ায় ভেসে যেতে এখন
নেশায় বিভোর মন।
তবু এ যাবার বেলায়
মন ক্লেশিত বিষণ্ণতায়,
বাতাসে বেহাগ নয়,
নিরন্তর এ সময়
শুনি শুধু বিভেদের ধ্বনি,
বিষ্টুর বিষ্ঠাভোগী নারদের নিষ্ঠাবান জারজসন্তান,
লাল-নীল-গেরুয়ায় রাঙিয়ে বসন
অসীম প্রত্যয়ে সবে মিলায়েছে হাত,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে ভোঁতা আর সব হাতিয়ার,
জারি শুধু ধর্ম-জাত-পাত,
দ্বিপদ মানববেশী মর্কটসকল
কলিজায় এঁকে দেয় লালসার ছাপ।
-রবি রায়
Please refrain from using the phone number shown in this blog.
It looks wrong somehow. Requested for error correction
The email address is the only means to communicate.
コメント