অশনিসংকেত সরু গলির ডান পাশ ঘুরলেই মেট্রো স্টেশন। আপন মনে চলে এসেছিলাম সেখানে। লকডাউনের উপহার, বিশুদ্ধ হাওয়ার খোঁজে। ফাঁকা চাতাল, নেই চায়ের দোকানের আড্ডা, নেই ঘরমুখী মানুষের ভীড়েঠাসা ফাষ্টফুড সেন্টার,
সর্পিল জ্যামিতির অটোরিকশার লাইন বা হকারদের হাঁক-ডাক। প্রকৃতির প্রাণখোলা হাওয়ায়, তিলোত্তমাকে নতুন করে আবিষ্কার করছি তখন। হঠাৎ, আইন ভাঙ্গার অপরাধে, লাঠিধারির মৃদু তিরষ্কার! হুঁশ ফিরলো, তাই দ্রুত পায়ে ফিরে আসছি.... রিক্সাস্ট্যান্ডের কোনে, চোখে পড়লো মানুষটাকে, জড়ো-সড়ো, দু'পায়ের ফাঁকে মাথা রেখে বসে আছে "সুদান"-- বিলক্ষণ চিনেছি তাকে। আশপাশের দোকানে ফাই-ফরমাস খেটে দিন চলে তার। মুহূর্তে কৌতূহলী চোখ খুঁজে নেয়, সুদানের বাঁ হাতের কনুই, সরকারি আইনের ডান্ডায় ফুলে নীল হয়ে আছে। আমার পা থেকে চোখ তুলে বলে, "শালা, হারামিগুলো বলে কিনা, ঘর যা-" করুণ আকুতি ভরা চোখ দু'টো, জানতে চায়- " দাদা... কোথা মোর ঘর"? মেট্রোর সিঁড়িতে নিত্য যার বসে থাকা, চাতাল বা বন্ধ দোকানের দাওয়ায় রাত যাপন, সত্যি তো! কোথা তার ঘর...? বুঝলাম, এ সত্য হজম করা কঠিন, দ্রুত সরে এলাম ওই স্থান ছেড়ে। কানে বাজতে থাকলো.... "কোথা মোর ঘর....কোথা মোর ঘর..." তখনই, শুশুনিয়া পাহাড়ের বেহেড মাতাল, নরেন টুডুর কথাগুলো সপাটে চড় মারতে থাকে "তোদেরটো, এত্তবড়ো বাড়িটো আছে... আছে নরম তুলতুলে বিছানাটো, কত্তো বাহারি গাছটো লাগাস তোরা বারান্দায়, সাদা ধবধপে ছোট্ট কুকুরের গলায় বগলেস্, তোরা 'পেরাইভেট্' গাড়িটো চড়িস, জিন্স আর টাইট্ টপ্ পরা সুন্দরীরা তোদের চারপাশে ঘুরেটো বেড়ায়, কত্তো চাহিদা তোদের, আমি তো ওসব কিছু চাইনা বাবু.. শুধু দু'বেলা, দু'মুঠো ভাত চাই, তাও দিবিনা...?" সেলফি সর্বস্ব মুখগুলো, লজ্জায় মাথানত করে.. শেষে, পালিয়ে বাঁচতে চাই.... পালাতে পালাতে, পালাতে পালাতে শুনতে পাই সুদানরা চিৎকার করছে....... "লাখ লাখ মেট্রিকটন খাবার আছে সরকারি গোডাউনে, কিন্ত আমাদের তো কোনো রেশন কার্ড নেই, নেই কোনো আধার কার্ড, কিন্তু, খিদে আছে পেটে, যমের খিদে, দেনা, দুমুঠো ভাত, কোথা পাবো বলে দে না? আর তা যদি না পারিস.... ছিঁড়ে-খাবো, কেড়ে-খাবো সব... বাড়ি-গাড়ি, মান-ইজ্জত, আইন-আদালত, লুটে খাব সব.... কি রে, হারামিরা.. দিবি কি দু-দলা ভাত?" ছুটতে ছুটতে বাড়ির দাওয়ায় এসে, হোঁচট খেলাম, অলক্ষ্যে সরে যেতে থাকে, নদীতে গোত্রহীন লাশ, পংতিতে সাজানো কাঠের বেওয়ারিশ চিতা... গা গুলিয়ে ওঠে..... পিচগলা দুপুরের, স্তব্ধতা বাড়িয়ে তোলে, নরেন টুডু আর সুদানদের চিৎকার, কান ফেটে রক্ত ঝোড়ে পরে। মূহুর্তে, ওদের চোখে-মুখে আগুন দেখি আমি, রোষের আগুন, ক্রোধের আগুন..... "করোনার পর, মহামারী আসবে জেনে রাখ্, ভাইরাসে নয়, মরবো ক্ষুধার জ্বালায়, আর ভাত চাইতে চাইতে...… পেটের জ্বালায় মরতে মরতে.... তোদেরও গিলে খাবো সব।"
পলাশ
(রচনা কাল, জুন২০২০, পরিমার্জন-জুন ২০২১)
কোলাজ: পলাশ দাস
বিবস্ত্র কথামালা
পথে নেমে, বেসামাল হলো কথা, সামনে শুধু, জঠোর অন্ধকার, সাগর চরে, চায়ের ধোঁয়ায় চুমুক,
কাগজ-কাপে, শব্দ নিরবতা।
বৃষ্টি এসে, ধুয়ে দিয়েছে ধূলো, দুটি-মাথায়, একই আচ্ছাদন, কথা দিয়েছি, সবই কুড়িয়ে নেবো, বিবস্ত্র কথা, হবেনা যেথা শেষ।
সময়, তুমি বার্তা বয়ে দিও- চুপিসারে, এসেছিলাম আমি- নিশিথ নিদ্রা, কড়া নেড়ে জানায়, নিস্ফল ডাক পৌঁছে গিয়েছে, জানি।
কথার গুহায়, আসতে হবে তাকে, খবর দিও, ঠিক দুপুর দুটোয়, স্মৃতির কোলে, হারিয়ে যাচ্ছে সবই, দুপুর দুটো, নাকি রাত্রি সাড়ে ন'টায় !
-পলাশ দাশ
DO NOT USE THE PHONE NUMBER SHOWN BELOW ON THIS BLOG.
IT IS SOMEHOW APPEARING WRONG. FOR CORRECTING MISTAKES HAS BEEN APPEALED FOR.
THE ONLY MEANS OF COMMUNICATION IS email ADDRESS.
Comments