কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ১৮২৭ সালের ২৬ জুন অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নদীয়ার হরিপুর গ্রামে। যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ১৯১১ সালে তিনি শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে
ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করে প্রথমে নদীয়া জেলাবোর্ড ও পরে কাসিমবাজার রাজ-এস্টেটের ওভারসিয়ার হন। চাকরির পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাও শুরু করেন এবং অল্পকালের মধ্যেই কবি হিসেবে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। যতীন্দ্রনাথের ভাষা আবেগমুক্ত ও যুক্তিসিদ্ধ; তিনি সরাসরি বিষয়ের প্রকাশ ঘটান। তবে অন্ত্যপর্বের কাব্যগুলিতে তাঁর রোম্যান্টিক বিহবলতা ও চাঞ্চল্য প্রকাশ পেয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর জীবনদর্শন ও রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর জীবনদৃষ্টিতে মানবতাবাদ ও দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের প্রতি গভীর মমতা লক্ষণীয়। বহুকালচালিত সংস্কার শাসন নিষ্পেষণ এবং ধর্মের নামে মানুষকে নির্যাতনের যে অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছিল, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সেগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করেছিলেন। সমাজের কিছু মানুষ একদিকে জীবনের রূপ-রস-অর্থ-প্রাচুর্য কুক্ষিগত করেছে, আর অপরদিকে কিছু মানুষ কেবলই হয়েছে শোষিত। সমাজের গরিব শ্রেণীর মানুষ ধনীদের ভোগ-বিলাস উৎযাপনের টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যতীন্দ্রনাথ এই বৈষম্যের জন্য কেবল মানুষকেই দোষারোপ করেননি, তিনি বিধাতাকেও সন্দেহসংকুল করে ফেলেছেন।
হাট
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
(যে কবিতা শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়।)
দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি , মাঝে একখানি হাট সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট। বেচাকেনা সেরে বিকেলবেলায় যে যার ঘরে ঘরে ফিরে যায়; বকের পাখায় আলোক লোকায় ছাড়িয়া পূবের মাঠ ;
দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে উঠে দ্বীপ …আঁধারেতে থাকে হাট
নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা এক ক্লান্ত কাকের পাখে ; নদীর বাতাস ছাড়ে নিঃস্বাস পার্শ্বে পাকুড়-শাখে হাটের দোচালা মুদিল নয়ান কারো তরে তার নাই আহবান; বাজে বায়ু আসি বিদ্রুপ বাঁশি জীর্ণ বাঁশের ফাঁকে নির্জন হাটে রাত্রি নামিল একক কাকের ডাকে।
দিবসেতে সেথা কত কোলাহল চেনা অচেনার ভিড়ে কত না ছিন্ন চরণচিহ্ন ছড়ান সে ঠাঁই ঘিরে মাল চেনাচিনি, দর জানাজানি কানাকড়ি নিয়ে কত টানাটানি; হানাহানি করে কেউ নিলো ভরে কেউ গেলো খালি ফিরে দিবসে থাকে না কথার অন্ত চেনা অচেনার ভিড়ে।
কত কে আসিল কত বা আসিছে কত বা আসিবে হেথা
ওপারের লোক নামলে পশরা ছুটে এপারের ক্রেতা।
শিশির বিমল-প্রভাতের ফল,
শতহাতে সহি পরখের ছল
বিকালবেলায় বিকায় হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা।
হিসাব নাহিরে-এলো আর গেলো কত ক্রেতা বিক্রেতা
নুতন করিয়া বসা আর ভাঙা পুরানো হাটের মেলা
দিবসরাত্রি নুতন যাত্রি নিত্য নাটের খেলা।
খোলা আছে হাট মুক্ত বাতাশে
বাধা নাই ওগো-যে যায় সে আসে;
কেহ কাঁদে কেহ গাঁটে করি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা
উদার আকাশে মুক্ত বাতাশে চিরকাল একই খেলা।
।। ২৬ জুন, ১৮২৭, দুঃখবাদী কবি হিসেবে খ্যাত যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের জন্মদিন ।।
----------------------------------------------------------------------------------------------
বাঙালি কবি ও সাহিত্যিকদের সম্পর্কে নানা তথ্য এই লিংকে পাওয়া যাবে।
DO NOT USE THE PHONE NUMBER SHOWN BELOW ON THIS BLOG.
IT IS SOMEHOW APPEARING WRONG. FOR CORRECTING MISTAKE HAS BEEN APPLIED FOR.
Comments